সাংস্কৃতিক সচেতনতার উন্নয়ন

সাংস্কৃতিক সচেতনতার উন্নয়ন

বাঙালী জাতির সংস্কৃতি হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। একটি জাতির ভিত কতটুকু মজবুত তা নির্ভর করে সে জাতির সাংস্কৃতিক গভীরতা, বৈচিত্রতা, ব্যাপকতা কতটুকু সুদৃঢ় ও শক্তিশালী। আমাদের সাংস্কৃতিক ভিত পৃথিবীর অনেক জাতির চেয়ে উচ্চতর, গভীরতর ও শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের বুকে জাতি হিসাবে আমরা একটা সুদৃঢ় অবস্থানে অধিষ্ঠিত হতে পারিনি, তার মূল কারণ শুধুমাত্র ঐতিহাসিকভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির অভাবের কারণের মধ্যেই নিহীত নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্ভাগ্যের মূল কারণও আমাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে ধারণ, সংরক্ষণ ও সঠিক মূল্যায়নের অভাব।

আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সাংস্কৃতিক সচেতনতার উন্নয়নের পথেই আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। আমাদের সাংস্কৃতিক গভীরতার বিচিত্র ক্ষেত্রে আবার ফিরে তাকানো, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ, সঠিক চর্চা এবং পূণর্মূল্যায়নের মাধ্যমেই এ পথের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।

লক্ষ্যঃ  স্বাধীনতার শত বছরের মধ্যে আমাদের হাজার বছরের শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ভিতকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে আত্মসচেতন জাতি হিসাবে নিজেদেরকে উজ্জ্বলতর অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করা। 

সাংস্কৃতিক সচেতনতার উন্নয়নে ধাপে ধাপে আত্মসচেতন বাংলাদেশের দীর্ঘ মেয়াদী কর্মপরিকল্পনাগুলো হলো নিম্নরূপঃ

১) বাংলাদেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে কাজ।

২) ঐতিহাসিক স্থান ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ।

৩) জাতীয় দিবসের উপর মননশীল ও সৃজনশীল কাজ।

৪) বাংলাদেশের ষড়ঋতু নির্ভর সৃজনশীল কাজ।

৫) বিচিত্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ।

৬) লোক সঙ্গীত, বাউল সঙ্গীত ও মরমী সঙ্গীত নিয়ে কাজ।

৭) শতাধিক (৩৬০টি) লোকনাট্যের ফর্ম নিয়ে মননশীল ও সৃজনশীল কাজ।

৮) বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান নির্ভর কাজ।

৯) বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পেশা ভিত্তিক মননশীল ও সৃজনশীল কাজ।

১০) বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কাজ।

১১) বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ অঞ্চল ভিত্তিক নারী-পুরুষদের পোশাক নিয়ে কাজ।

১২) বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা নিয়ে কাজ।

১৩) দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য বিভিন্ন গৃহস্থালি আসবাবপত্র নিয়ে কাজ।

১৪) বাংলার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ক্রমধারা ও বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে মননশীল ও সৃজনশীল কাজ।

১৫) বাংলা সাহিত্যের ক্রমধারা ও বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে মননশীল ও সৃজনশীল কাজ।

১৬) বাংলার হাজার বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে মননশীল ও সৃজনশীল কাজ।

১৭) বাংলার সংস্কৃতির উপর জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, সমতল-পাহাড়, নদ-নদী, হাওড়, জলাশয়ের প্রভাব নিয়ে মননশীল ও সৃজনশীল কাজ।

১৮) বাংলার সাংস্কৃতিক কাঠামো তৈরিতে পারিবারিক, গোত্র, সম্প্রদায় ও সামাজিক সম্পর্কের প্রভাব নিয়ে মননশীল ও সৃজনশীল কাজ।

১৯) প্রত্নত্বাত্তিক নির্দেশন, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রাচীন উপাসনালয় এবং সাধকদের ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ভেতর দিয়ে সাংস্কৃতিক গতিধারা অনুসন্ধান নিয়ে মননশীল ও সৃজনশীল কাজ।

সাংস্কৃতিক সচেতনতার উন্নয়নে উপরোক্ত কাজগুলো যে সব মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে তা হলোঃ

♦ সৃজনশীল অনুষ্ঠান নির্মাণের মাধ্যমে
♦ গবেষণা ও প্রকাশনামূলক কাজের মাধ্যেমে
♦ থিয়েট্রিক্যাল প্রোডাকশান নির্মাণের মাধ্যমে
♦ কর্মশালা ও সচেতনতামূলক প্রচারণার মাধ্যমে
♦ অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রোডাকশান নির্মাণের মাধ্যমে
♦ সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা ও চারু-কারুকলার মাধ্যমে।

সাংস্কৃতিক সচেতনতার কার্যক্রমগুলো যাদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবেঃ

ক) আত্মসচেতন বাংলাদেশ নিজস্ব কার্যক্রম।

১) গবেষণামূলক কার্যক্রম, ২) সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সৃজনশীল মাধ্যমে কার্যক্রম,

৩) অডিও-ভিজ্যুয়াল কার্যক্রম, ৪) অনলাইন কার্যক্রম।

খ) সাংস্কৃতিক সংগঠন ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সচেতনতার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম।

গ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সচেতনতার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম।

স্বীকৃতি ও পুরস্কারঃ

♦ সেরা গবেষণা পত্রের স্বীকৃতি ও পুরস্কার। 
♦ সেরা অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রোডাকশানের স্বীকৃতি ও পুরস্কার।
♦ সেরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্বীকৃতি ও পুরস্কার।
♦ সেরা থিয়েট্রিক্যাল প্রোডাকশানের স্বীকৃতি ও পুরস্কার।
♦ সাংস্কৃতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সেরা অবদানকারীর স্বীকৃতি ও পুরস্কার।
♦ সাহিত্য ক্ষেত্রে সেরা অবদানকারীর স্বীকৃতি ও পুরস্কার।
♦ সঙ্গীতে সেরা অবদানকারীর স্বীকৃতি ও পুরস্কার।
♦ চিত্রকলায় সেরা অবদানকারীর স্বীকৃতি ও পুরস্কার।
♦ চারু-কারুকলায় সেরা অবদানকারীর স্বীকৃতি ও পুরস্কার।

চলমান প্রকল্পঃ

১) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সচেতনতার উন্নয়ন প্রকল্পঃ

(প্রতিষ্ঠানের নামঃ বিদ্যাভুবন।)

♦ নিয়মিত থিয়েট্রিক্যাল প্রজেন্টেশনের মাধ্যমে সিসিএলএস (ক্রিয়েটিভ এন্ড কমিউনিক্যাটিভ লার্নিং সিস্টেম)
♦ সাপ্তাহিক সৃজনশীল (গান, ছবি আঁকা, লেখালেখি, কবিতা আবৃত্তি, চারুকারু ইত্যাদি) ক্লাসের আয়োজন।
♦ সারা বছর ইভেন্ট ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে বিভিন্ন দিবস ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।
♦ স্কুলের বাইরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ।

২) “চিরায়ত বাংলার স্বরূপ সন্ধান” নামক হাজার বছরের বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নির্ভর অনুষ্ঠানের আয়োজন।

বিদ্যাভুবনে সাপ্তাহিক সৃজনশীল ক্লাস।
অর্জনের লক্ষ্যমাত্রাঃ

♦ আগামী ৫ বছরে ১ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে সাংস্কৃতিক সচেতনতার উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করা।
♦ আগামী ১০ বছরে ৫০ ভাগ মানুষকে সাংস্কৃতিক পুনরুদ্ধারকৃত শক্তির বলয়ের দিকে আকৃষ্ট করানো।
♦ আগামী ৫ বছর পর থেকে প্রতিবছর ২৫০০ এরও বেশি সাংস্কৃতিক সচেতনতার উন্নয়নমূলক মননশীল ও সৃজনশীল কাজ সংযুক্ত হবে।
♦ আগামী ৫০ বছরে ১.২ লক্ষ এরও বেশি সাংস্কৃতিক সচেতনতার উন্নয়নমূলক মননশীল ও সৃজনশীল কাজ সঞ্চিত হবে।
♦ আত্মসচেতন বাংলাদেশ প্রতি বছর বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য নূন্যতম ছয়টি বিশ্বমানের ইভেন্ট তৈরি করবে।